‘হুমকি’র আইনগত প্রতিকার কী?

   

‘হুমকি’র আইনগত প্রতিকার কী? কেউ কাউকে হুমকি দিলে তার আইনি পদক্ষেপ কী হবে এবং এর সর্বোচ্চ শাস্তি কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ ও আইনজীবীরা বলেছেন, ‘কেউ হুমকির শিকার হলে তাকে অবশ্যই থানায় যেতে হবে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে অবহিত করতে হবে। এরপর পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তাছাড়া হুমকি’র শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। প্রয়োজনে পুলিশও স্বপ্রণোদিত হয়েও যেকোনও নাগরিকের পক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালকে হেফাজতে ইসলাম নেতাদের প্রকাশ্য হুমকি’র বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ কী হতে পারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যার হুমকি দিলে থানায় জিডি এন্ট্রি করতে হবে। জিডি এন্ট্রি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে একটা নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ বলবে, জিডির পর তদন্ত করে দেখা গেছে, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক। অতএব হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করা হলো। এরপর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

‘হুমকির শিকার ব্যক্তি কিংবা তার পক্ষে যেকেউ এ জিডি করতে পারেন, আদালতেও সরাসরি যেতে পারবেন একই ধারার ক্ষমতাবলে’, যোগ করেন এই আইনজীবী।

পুলিশের পক্ষ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে কিছু করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই হুমকি’র শিকার ব্যক্তি কিংবা তার পক্ষে যে কাউকে জিডি করতে হবে। কারণ, পুলিশকে হুমকি’র বিষয়টি জানতে হবে ও তথ্য পেতে হবে। এছাড়া রাষ্ট্রের যদি কোনও বিশিষ্ট নাগরিক হুমকির শিকার হন, তাহলে পুলিশও বলতে পারে, ‘তার নিরাপত্তা দেওয়া দরকার। বিষয়টা থানায় নোট বা ডায়েরি করা হলো। তার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ কারণ, পুলিশ যদি দেখে যেকোনও নাগরিক হুমকি’র সম্মুখীন, তাহলে যেকোনও মুহূর্তে কোনও অভিযোগ ছাড়াই আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। তবে স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করতে গেলে পুলিশের কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”

প্রকাশ্যে হুমকির সাজা প্রসঙ্গে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ হুমকি হলে ৫০৬ ধারায় শাস্তি দুই বছর হতে পারে। আর হত্যার হুমকি হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবনও হতে পারে হুমকিদাতার।’

হেফাজত নেতাদের প্রকাশ্য হুমকির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘পুলিশ নিজেরাই এসে আমার সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তা দিচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে- তারা তো (হেফাজত নেতারা) প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়েছেন। সরকার ও প্রশাসন সেটা শুনেছে। তারাই সেটা সামলাবে।’

কিন্তু যিনি ‘হুমকি’র শিকার হয়েছেন তাকে তো আইনের আশ্রয় চাইতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি।’

সুলতানা কামালকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি’র পর পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কোনও সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি এ এস এম মাসুম রাব্বানী বলেন, ‘না কিভাবে করবে? আপনি মনে করেন, আপনাকে কেউ হুমকি দিয়েছে, আপনি যদি আমাকে না জানান, তাহলে আমার পক্ষে জানার সুযোগ আছে কি? বাদি লাগবে। পুলিশের যেকোনও কাজে বাদি লাগে। একটা মানুষ মারা গেলে যদি বাদি না পাওয়া যায় তখন পুলিশ বাদি হতে পারে। কিন্তু কেউ হুমকি দিয়েছে সেটা তাকেই বলতে হবে। তাকে যদি কেউ হুমকি দিয়ে থাকে তাহলে তাকে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে। আর এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে পুলিশ নিজে থেকে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেবে?’

সুলতানা কামালের নিরাপত্তা ও হুমকির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হত্যার হুমকি’র বিষয়ে সুলতানা কামালের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে তিনি বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে তার নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সব সময় দেখে থাকি। এখনও দেখছি।’

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরানোর বিষয়ে টকশো প্রচারিত হয়। ওই টকশোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ভাস্কর্য সরানোর বিষয় নিয়ে হেফাজত নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্যের জের ধরে গত শুক্রবার (২ জুন) হেফাজত নেতারা তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন। ওইদিন সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, “সুলতানা কামালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করুন। না হয় তাকে তসলিমা নাসরিনের মতো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিন। সাহস কত সুলতানা কামালের! তিনি (সুলতানা কামাল) বলেছেন, ‘ভাস্কর্য থাকতে না দিলে মসজিদ থাকতে দেওয়া হবে না।’ সুলতানা কামাল রাজপথে নেমে দেখুন, হাড্ডি-গোস্ত রাখা হবে না।”

অন্যদিকে, ক্ষমা না চাইলে সুলতানা কামালকে চট্টগ্রামের মাটিতে নামতে দেওয়া হবে না বলেও গত ৪ জুন হুমকি দেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতারা।

জেরায় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন কখন করা যায়

 
  সাক্ষ্য আইনের ১৪১ ধারা অনুযায়ী ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন হলো, ‘প্রশ্নকারী প্রশ্নের যে উত্তর আশা করে বা ইচ্ছা করে, প্রশ্নের মাধ্যমেই তার ইঙ্গিত দেয়া হলে তাকে ‘ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন’ বলে।’ আরো সহজভাবে বলতে গেলে প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর রাখা হয় যে প্রশ্নে। যেমন : ‘আপনি কি ২৮ তারিখে বিকালবেলায় পিরোজপুর গিয়েছিলেন?’ জবাবটি হ্যাঁ অথবা না কিংবা মাথা নাড়িয়েও জবাব দেয়া যায় বলেই প্রশ্নটিকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বলা হয়।
জবানবন্দি বা পুনঃজবানবন্দি গ্রহণকালে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা একেবারে নিষিদ্ধ হলেও কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জবানবন্দি ও পুনঃজবানবন্দির সময় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করার অনুমতি দিয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম করা হয়েছে। ব্যতিক্রমগুলো হলো_ (১) বিরুদ্ধ পক্ষ আপত্তি উপস্থাপন করতে না পারলে বা আপত্তি না থাকলে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (২) সাক্ষীকে প্রশ্ন করার আগে খানিকটা ভূমিকার অবতারণা করার প্রয়োজনে ভূমিকা বিষয়ে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৩) প্রমাণিত বা বিরোধ নেই এমন বিষয়ে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৪) কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে শনাক্ত করার প্রয়োজনে সাক্ষীর দৃষ্টি বা বস্তুর দিকে আকর্ষণ করে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৫) সাক্ষীর স্মৃতিতে প্রশ্নের জবাব উদিত না হলে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৬) সাক্ষী যদি শিশু, মূর্খ অথবা প্রশ্ন বুঝতে অক্ষম হয়; তবে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৭) বৈরী সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। সাধারণত বিজ্ঞ আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিষয়গুলো বিবেচনা করে অনুমতি দিয়ে থাকে। জবানবন্দির ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করার অনুমতি না থাকলেও জেরায় বিরুদ্ধ পক্ষ সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করতে পারেন। সাক্ষ্য আইনের ধারা ১৪৩ অনুযায়ী, ‘জেরায় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যাবে।’ যেমন : ‘ঘটনাস্থলে রাস্তার বাতিগুলো জ্বলছিল, তাই নয় কি?’, ‘আসামি তখন কালো কোট পরিহিত ছিল, তাই না?’, ‘সড়কটিতে ছিনতাইকারীদের অনেক উপদ্রব তাই না?’ জেরা করার মূল উদ্দেশ্য হলো; (১) বিপরীত সাক্ষ্যকে দুর্বল করা। (২) সাক্ষীর কাছ থেকে পক্ষে কিছু বক্তব্য আদায় করা। (৩) সাক্ষী যে বিশ্বাসের অযোগ্য, ভুল বা মিথ্যা এটি প্রদর্শন করা। (৪) সাক্ষীর দেয়া সাক্ষ্যকে সন্দেহযুক্ত করা।

সুপ্রিমকোর্ট ভবনে ‘বিচার জাদুঘর’ করার চিন্তা

 
সুপ্রিমকোর্ট ভবনে ‘বিচার জাদুঘর’ করার চিন্তাআইন ও বিচার ডেস্ক বিচার শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবনটিতে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করবে আইন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে করণীয় ঠিক করছে। ভবনটিতে জাদুঘর করার জন্য যে প্রক্রিয়া ও আনুষ্ঠানিকতা দরকার তা-ও করতে যাচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করেছেন। এখনো অনেকের বিচারকাজ চলছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া, ইতিহাসের পাতায় বিষয়টি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাক। আর সেজন্য তারও আগ্রহ রয়েছে এ বিচারকাজের সব নথিপত্র, রায় ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র ও এ ভবনের এর আগের যত প্রতিষ্ঠান ছিল সেগুলোরও কর্মকা- তুলে ধরে এরপর সেখানে সেগুলোকে সংরক্ষণ করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশের যারা এই ভবন নিয়ে ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, রায়, রায় কার্যকর করা মামলা পরিচালনার জন্য কাজ করবেন তাদের গবেষণা করতে যেন সুবিধা হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ তৈরি হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিয়ে ওই ভবনটি দখলমুক্ত করে তা আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের বুঝিয়ে দিতে বলেছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সেটা দিতে চাইছে না। তবে এখন পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে তারা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। আইন মন্ত্রণালয় আরও কয়েকদিন সময় নিতে চাইছে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের রেজিস্ট্রারের চিঠির জবাব দেবেন।
আজকে যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেই ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সেখানে ব্রিটিশ আমলে গভর্নর জেনারেল থাকতেন, এরপর পাকিস্তান আমলে ইস্ট পাকিস্তান হাইকোর্ট ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুপ্রিমকোর্ট করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠা করা হয় ল’ কমিশনসহ একাধিক অফিস। এরপর প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
জাদুঘর করা হলে সেটাকে কি একটি আদালত ভবনের ভিতরে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব? এ ব্যাপারে তিনি জানান, এটা সম্ভব। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেই সেটা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও গবেষকরা সেখানে যেন গবেষণা করতে পারেন সেজন্য একটি লাইব্রেরিও থাকবে। দেশের গবেষকরা ছাড়াও বিদেশ থেকে যারা গবেষণা করতে চান তা-ও করতে পারবেন।
জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি অনুমতি দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে। আর কথা বলেই তার সম্মতি নিতে হবে। তার সম্মতি না নিলে তিনি হয়তো তা না-ও দিতে চাইতে পারেন। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি তাকে বোঝালে তিনি বুঝবেন। তাছাড়া আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আমি মনে করি কোনো মতেই এ ভবন থেকে এখন এই আদালত সরিয়ে ভবনটি দখলমুক্ত করা যাবে না। বিচারকাজ চলবে। বিচারকাজ শেষে সেখানে জাদুঘর স্থাপন করা হবে। এর বাইরে সরকারের কোনো ধরনের ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। বিচারকাজ চলার জন্য নিরাপত্তারও ব্যাপার আছে। অন্য জায়গায় আদালত সরিয়ে বিচারকাজ করাও কঠিন হবে। তাছাড়া আমরা যখন এটা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম তখনই পরিকল্পনা ছিল সেখানে জাদুঘর স্থাপন করার। সেটা এখন বদল করা ঠিক না।
একজন মন্ত্রী বলেন, চাইলেই সরকার এখন হাইকোর্ট ভবন দখলমুক্ত করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে পারবে না। কারণ এখন শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হয়েছে। আরো অনেকের বিচার চলছে। আবার কারও কারও বিচার শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সেই হিসেবে এই বিচারকাজ শেষ হতে আরও অনেক বছর লেগে যাবে। আমরা আগেই এ ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিতে চাই জাদুঘর করার বিষয়টি। আর এখন যদি সরকার এখান থেকে আদালত সরিয়ে নেয়, এনিয়ে জনমনে ভুল ধারণা তৈরি হবে।

জমিজমার বিরোধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা

জমিজমাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় বিরোধ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, নিজের কেনা জমি অন্য কেউ দখল করে মালিকানা দাবি করছে কিংবা জাল দলিল তৈরি করে জমির দখল নিতে চায়। আদালতে মিথ্যা মামলাও ঠুকে দেয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সে জন্য জানা থাকতে হবে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে কীভাবে প্রতিকার পাবেন। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন আবরার মাসুদ

মতিন ও আসাদ পাশাপাশি বাস করলেও তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মতিনের ভাই বাতেন ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এরপর থেকে মতিনের তোড়জোড় বেড়ে গেছে আগের চেয়ে। একদিন হঠাৎ করে মতিন এসে দাবি করে, আসাদ যে জমিতে বাস করছে এই জমি মূলত দলিল অনুসারে তার পৈতৃক সম্পত্তি। আসাদও রেগেমেগে তার দলিল নিয়ে আসে। কিন্তু মতিন সে দলিল দেখতে নারাজ। মতিন জানায়, দুদিনের মধ্যে আসাদকে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। নয়তো তাকে জোর করে সরিয়ে দেয়া হবে। দুদিন পর দলবল নিয়ে এসে ঠিকই মতিন আসাদকে ঘরছাড়া করে জমির দখল নিয়ে নেয়। আসাদ ভাবতেও পারেনি ঘটনা এতদূর গড়াবে। সে ভেবেছিল, মতিন তার সঙ্গে ক্ষমতার দর্প দেখাচ্ছে এই যা। ভিটেছাড়া হয়ে আসাদ পড়ল অথৈ সাগরে। কী করবে এখন সে? আইন-আদালতের আশ্রয় নিয়ে এই জমির মালিকানা নির্ণয় করতে করতে তো বহু সময় লেগে যাবে। ততদিন সে কোথায় থাকবে? আসাদের জন্য কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিকার আছে কি?

জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় রকম মামলার মধ্যদিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। ফৌজদারি মামলার মধ্যদিয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য বিচারিক হাকিমদের কাছে নয়, বরং নির্বাহী হাকিম তথা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের শরণাপন্ন হতে হয়। মাসদার হোসেন মামলার মধ্যদিয়ে আমাদের বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পরও এখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় হাতেগোনা কিছু ক্ষেত্রে বিচার-আচার করতে পারেন, যার একটি হলো এই জমিসংক্রান্ত বিরোধ। জমি নিয়ে বিরোধ হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মূলত একটি সাময়িক প্রতিকার প্রদান করেন দখল বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে সবশেষ দখলে থাকা ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে স্বত্ব দখল কিংবা জবরদস্তি বেদখলের বিরুদ্ধে দেওয়ানি আদালতে নিয়মিত মামলা করে নানারকম দেওয়ানি প্রতিকার পাওয়া যায়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আইনের এসব বিধিবিধান সবারই জেনে রাখা উচিত।

ফৌজদারি প্রতিকার
জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।

মালিকানা দাবি করবেন যেভাবে
জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তার স্বত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছে এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তার মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কিনা; বিবাদী তাকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কিনা; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কিনা।
তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।
কোথায় ও কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন
জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান ১৫ লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং ১৫ লাখের বেশি এবং ২৫ লাখ টাকার কম হলে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। ২৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা করতে হবে জেলা জজ আদালতে। মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালোরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণ কোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন, তার জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।

ভূমি সুরক্ষা আইন আসছে

ভূমি সুরক্ষা আইন আসছেগাজী শাহনেওয়াজ যত্রতত্রভাবে ভূমির ব্যবহার বন্ধে প্রণয়ন হচ্ছে ভূমি সুরক্ষা আইন। যার মাধ্যমে কৃষি জমির সুরক্ষা এবং ভূমির অবাধ ব্যবহার কমে আসবে মনে করছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এগুলো ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১৬’ দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
আইনে বলা হয়েছে, ভূমি জোনিংয়ের কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ভূমির সর্বোত্তম ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এই আইন লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে ভূমি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তবে সমুদ্র ও নদী থেকে কিছু জমি বাড়ছে। ভূমি সমস্যা এদেশে নতুন নয়; বহুবছর ধরে এটা চলে আসছে। ঔপনিবেশিক সরকার আমলেও সমস্যা ছিল। এ কারণে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তাই অযৌকিক্তকভাবে যাতে কৃষি জমির ব্যবহার না হয় সেজন্য এই আইন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ভূমি ব্যবহার বাস্তবায়ন কমিটির সভা গত মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এ খসড়ার উপরে আগস্টে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের মতামত ও পরামর্শ নেয়া হয়। এ আইনের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনও মতামত দিয়েছে।
আইন প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ বাংলাদেশ। একলাখ চুয়ালি্লশ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত রাষ্ট্রে ১৬ কোটির বেশি মানুষ। ফলে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে নিয়ত কমছে কৃষিজমি। চাপ বাড়ছে ভূমির ওপরে। এগুলোর প্রভাবে প্রতিনিয়তই ভূমির প্রকৃতি ও ভূমির শ্রেণিগত ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটছে।
পাশাপাশি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা. পাহাড় ও জলাশয়/জলমহাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন পড়ছে হুমকির মুখে। মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশও। এই অনুকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অপরিকল্পিত বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা বা রাস্তাঘাট নির্মাণ বন্ধে ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রাখা এখন চ্যালেঞ্জ। এমনকি পরিবেশ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কৃষিজমি ও কৃষিপ্রযুক্তির প্রায়োগিক সুবিধার সুরক্ষা জরুরি। একই সঙ্গে ভূমির পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সমীচীন।
এদিকে, আইনের ৬ ধারায় বলা আছে, ‘কৃষিজমি’ বলতে ফসলি জমি, বনভূমি, গোচারণ ভূমি, খড় উৎপাদনের ভূমি, পশুখাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ব্যবহৃত ভূমি, চা বাগান, ব্যক্তিগত বনভূমি, ফলদ উদ্ভিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ভূমিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও ফলমূল, শাকসবজি, মসলা, ডাল, তেলজাতীয় খাদ্য, ঔষধি, সুগন্ধি, প্রাকৃতিক রং, বাঁশ, বেত, হোগলা-গোলপাতা ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদন করা হয়; এমন ভূমি, মাছ চাষের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের জলাশয়- কৃষিজমির অন্তর্ভুক্ত হবে।
আইনের ৪(১) ধারাতে বলা হয়েছে, আইনের মাধ্যমে কৃষিজমি সুরক্ষা করতে হবে এবং কোনোভাবেই তার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসন, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুর্বর, অকৃষি জমিতে আবাসন, বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। যে কোনো শিল্প-কারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস ভবন, বাসস্থান এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মণের ক্ষেত্রে ভূমির ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে। এজন্য থাকবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।
কৃষিজমি যে কেউ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারলেও তা আবশ্যিকভাবে শুধু
কৃষিকাজেই ব্যবহার করতে হবে। একাধিক ফসলি জমি সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো অবস্থাতেই অধিগ্রহণ করা যাবে না। কৃষিজমিতে চিংড়িমহল হিসেবে ঘোষণা করাও যাবে না।
কৃষিজমি ছাড়া অন্য জমির সুরক্ষা: ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেসব জমি বনভূমি, টিলা-পাহাড় শ্রেণির, জলাভূমি, চা বাগান, ফলের বাগান, রাবার বাগান ও বিশেষ ধরনের বাগান হিসেবে পরিচিত; তাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভূ-প্রকৃতিগত কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপচয় রোধে জমির অধিগ্রহণ নূ্যনতম পর্যায়ে রাখতে হবে এবং অধিগ্রহণকৃত জমির অপব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। অধিগ্রহণকৃত জমি বেদখল থাকলে তা অনুসন্ধান করে মুক্ত করতে হবে।
ভূমির অপচয় রোধে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে একই এলাকায় নিবিড়ভাবে স্থান সংকুলানের ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে। কৃষিজমিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ফসল ( যেমন-তামাক) উৎপাদনও করা যাবে না।
জলাভূমির সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধার: খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও ঝিলসহ যে কোনো ধরনের সায়রাতমহালের বা জলাভূমির কোনো শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। হাটবাজার, বালুমহাল, পাথরমহাল, বাগান মহাল, প্রত্নতাত্তি্বক এলাকারও শ্রেণি পরিবর্তন ঘটানো যাবে না।
ভূমি অধিগ্রহণ : অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের বিধান অনুসরণ করা হবে। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করার আগে অধিগ্রহণকৃত জমি পূর্ণর্ ব্যবহার না করে অধিগ্রহণ করা যাবে না।
ভূমি জোনিং: সরকার ভূমির বিদ্যমান বহুমাত্রিক ব্যবহার, প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য ও অন্তর্নিহিত ক্ষমতা এবং গুণাগুণ অনুযায়ী কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, বন, চিংড়ি চাষ, শিল্পাঞ্চল, পর্যটন, প্রত্নতাত্তি্বক এলাকা এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য এলাকার ক্ষেত্রে ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে পর্যায়ক্রমে ভূমি জোনিংয়ের ব্যবস্থা করবে।
এর মানচিত্র : সব পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়নে ভূমির ব্যবহার ও গুণাগুণভিত্তিক এলাকা চিহ্নিত করে ভূমি জোনিং মানচিত্র প্রস্তুত করতে হবে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ এবং পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মানচিত্র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে প্রস্তুত করার কথা বলা আছে। এছাড়া দেশের সব জমির জন্য ভূমি জোনিং করতে হবে। ভূমি জোনিং মানচিত্র মৌজা বা ইউনিয়ন, ওয়ার্ডভিত্তিক করতে হবে। ভূমির বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সম্পর্কিত তথ্য ভূমি জোনিং মানচিত্রে উল্লেখ থাকবে। সকল ভূমি জোনিং মানচিত্র রঙিনভাবে মুদ্রিত হবে এবং প্রতিবেদনসহ ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখা হবে।

মজুদদারি ও কালোবাজারি রোধে আইন

: শিক্ষানবিস আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজকোর্ট রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী
প্রাত্যহিক জীবনে লেনদেনে কিংবা ব্যবসায়-বাণিজ্যে পণ্য ও মূল্যের বিনিময় হয়ে থাকে। ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে পণ্য ও মূল্যের যৌক্তিক বিনিময় আদান-প্রদান না করে যখন বিক্রেতা অতিমুনাফার লোভে চড়ামূল্যে বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে পণ্যসামগ্রী কুক্ষিগত করে, তখন সেই কাজটিকে বলা হয় ‘মজুদদারি’। এর ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতি বছরই রমজান মাসে তরিতরকারির দাম আকাশছোঁয়া হয়। ইফতারি তৈরির সামগ্রী ও পেঁয়াজ, রসুন, লবণ, ডাল, সুগন্ধি চালসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম রোজার আগেই বাড়তে থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণে নেয়। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ধর্মপ্রাণ মানুষের আয়-রোজগার না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায় এ সময়টায়। এ কারণে অনেক সময় সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অবস্থা উদ্ভূত হয়। দেশের বিদ্যমান আইনমতে, খাদ্য ও পণ্যের উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটাতে পারেন না। যদি কেউ এমন কাজ করেন, তবে আইনের দৃষ্টিতে ‘অপরাধী’ হিসেবে সাব্যস্ত হবেন।
আইনে ‘মজুদদারি’কে একটি ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মজুদদারি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মজুদদারির অপরাধে কঠোর সাজার বিধান বলা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(ঙ) ধারায় মজুদদারির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মজুদদারি বলতে বোঝায় কোনো আইন দ্বারা বা আইনের আবর্তে কোনো ব্যক্তি মজুদ অথবা গুদামজাত করার সর্বোচ্চ পরিমাণের বেশি দ্রব্য মজুদ বা সংরক্ষণ করা।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(১) ধারায় মজুদদারি বা কালোবাজারি ব্যবসার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেউ মজুদদারি বা কালোবাজারে লেনদেনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সে মৃত্যুদ- বা আজীবন কারাদ- বা চৌদ্দ (১৪) বছর পর্যন্ত ব্যপ্ত হতে পারে এমন সশ্রম কারাদ- ও একই সঙ্গে অর্থদ-ে দ-নীয় হবে। আর যদি মজুদদারির অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রমাণ করে, সে আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে লাভের জন্য মজুদ করেনি, সে ক্ষেত্রে তাকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত কারাদ- এবং অর্থদ-ে দ-িত করা যাবে।
আদালত মজুদদারি বা কালোবাজারে লেনদেন করার অপরাধে শাস্তি প্রদান করার সময় যা সম্পর্কে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা সরকার-বরাবর বাজেয়াপ্ত করার আদেশ প্রদান করে।

জেরায় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন কখন করা যায়

 
  সাক্ষ্য আইনের ১৪১ ধারা অনুযায়ী ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন হলো, ‘প্রশ্নকারী প্রশ্নের যে উত্তর আশা করে বা ইচ্ছা করে, প্রশ্নের মাধ্যমেই তার ইঙ্গিত দেয়া হলে তাকে ‘ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন’ বলে।’ আরো সহজভাবে বলতে গেলে প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর রাখা হয় যে প্রশ্নে। যেমন : ‘আপনি কি ২৮ তারিখে বিকালবেলায় পিরোজপুর গিয়েছিলেন?’ জবাবটি হ্যাঁ অথবা না কিংবা মাথা নাড়িয়েও জবাব দেয়া যায় বলেই প্রশ্নটিকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বলা হয়।
জবানবন্দি বা পুনঃজবানবন্দি গ্রহণকালে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা একেবারে নিষিদ্ধ হলেও কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জবানবন্দি ও পুনঃজবানবন্দির সময় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করার অনুমতি দিয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম করা হয়েছে। ব্যতিক্রমগুলো হলো_ (১) বিরুদ্ধ পক্ষ আপত্তি উপস্থাপন করতে না পারলে বা আপত্তি না থাকলে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (২) সাক্ষীকে প্রশ্ন করার আগে খানিকটা ভূমিকার অবতারণা করার প্রয়োজনে ভূমিকা বিষয়ে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৩) প্রমাণিত বা বিরোধ নেই এমন বিষয়ে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৪) কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে শনাক্ত করার প্রয়োজনে সাক্ষীর দৃষ্টি বা বস্তুর দিকে আকর্ষণ করে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৫) সাক্ষীর স্মৃতিতে প্রশ্নের জবাব উদিত না হলে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৬) সাক্ষী যদি শিশু, মূর্খ অথবা প্রশ্ন বুঝতে অক্ষম হয়; তবে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। (৭) বৈরী সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। সাধারণত বিজ্ঞ আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিষয়গুলো বিবেচনা করে অনুমতি দিয়ে থাকে। জবানবন্দির ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করার অনুমতি না থাকলেও জেরায় বিরুদ্ধ পক্ষ সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করতে পারেন। সাক্ষ্য আইনের ধারা ১৪৩ অনুযায়ী, ‘জেরায় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যাবে।’ যেমন : ‘ঘটনাস্থলে রাস্তার বাতিগুলো জ্বলছিল, তাই নয় কি?’, ‘আসামি তখন কালো কোট পরিহিত ছিল, তাই না?’, ‘সড়কটিতে ছিনতাইকারীদের অনেক উপদ্রব তাই না?’ জেরা করার মূল উদ্দেশ্য হলো; (১) বিপরীত সাক্ষ্যকে দুর্বল করা। (২) সাক্ষীর কাছ থেকে পক্ষে কিছু বক্তব্য আদায় করা। (৩) সাক্ষী যে বিশ্বাসের অযোগ্য, ভুল বা মিথ্যা এটি প্রদর্শন করা। (৪) সাক্ষীর দেয়া সাক্ষ্যকে সন্দেহযুক্ত করা।

শিশু-কিশোরের শ্রম ও আমাদের আইন

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক

 

শ্রম আইনের ৩৪ ধারায় স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিশুকে নিয়োগ করা যাবে না এবং কাজ করতে দেয়াও যাবে নাআমাদের দেশে এখনো কত শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে তা নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বিভিন্ন মতামত থাকলেও একটা বিশাল অংশ যে আজো দুবেলায় দুমুঠো খাবারের বন্দোবস্ত করাটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সংগ্রাম মনে করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের কাছে রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন সবই বিলাসিতা। যাদের কাছে আইন বিলাসিতা তাদের কাছেই সময়ে সময়ে ওই আইনই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। হবে না কেন? যারা আজো বিশ্বাস করে কন্যাসন্তান অভিশাপ, পুত্রসন্তান আশীর্বাদ। ছেলে হলে কাজ করে খাওয়াবে আর মেয়ে হলে কাঁধের বোঝা_ এই ধারণা আজো চলমান। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গার্মেন্ট সেক্টর কিংবা কারখানায় বিভিন্ন মজুরিতে কম বয়সী শিশু-কিশোরদের কাজে নিয়োগের প্রচলন করার পর থেকেই এই ছেলেমেয়ের বৈষম্য প্রথাটা কিছুটা কমে গেছে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কর্মদক্ষতা প্রশংসনীয় হওয়ায় এই কম বয়সী শ্রম সেক্টরে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। দরিদ্রতা দূরীকরণে এভাবে কম বয়সীদের বিভিন্ন শ্রমপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণে যতটা কার্যকারিতা অনুভব হচ্ছে, সেই তুলনায় শ্রম আইনসংক্রান্ত আইন-কানুন, বিধিনিষেধ ঢালাওভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ধারা ৩৪ থেকে ৪৪ কিশোর শ্রম নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে যেখানে শিশু শ্রমও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যা ঢালাওভাবে অমান্য করা হচ্ছে।
প্রথমেই জানা উচিত শিশু কারা আর কিশোর কারা? আমরা জানি একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য আমরা ১৮ বছরকে আদর্শ হিসেবে ধরে নিই। শ্রম আইনের ধারা ২-এর ৬৩ উপধারায় শিশু বলতে ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেনি এমন বয়সীদের বোঝানো হয়েছে এবং উপধারা ৮-এ বলা হয়েছে, কিশোর বলতে ১৪ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তিকে বোঝাবে। কারা শিশু এবং কারা কিশোর তা স্পষ্ট হওয়া গেল। এবার জানা যাক তাদের কাজে নিয়োগে বিধিনিষেধ।
শ্রম আইনের ৩৪ ধারায় স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিশুকে নিয়োগ করা যাবে না এবং কাজ করতে দেয়াও যাবে না। অর্থাৎ শিশুকে যেমন কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না, ঠিক তেমন শিশু নিজে কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজ করতে দেয়া যাবে না। কিশোরের ক্ষেত্রেও এমন বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে যদি না আইন দ্বারা নির্ধারিত ফরমে একজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক ওই কিশোরকে সক্ষমতার প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয় এবং সেটি মালিকের হেফাজতে থাকে। পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় কিশোরকে ওই প্রত্যয়নপত্রের উল্লেখসংবলিত একটি টোকেন বহন করতে হবে। তবেই কিশোররা আইনত কিশোর শ্রমিক হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে পারে বা কাজ করতে পারে। উপরোক্ত বিধিনিষেধ মেনে যখন একজন কিশোর কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করবে তখন তার কাজের সময়সীমা, কী কাজ করতে পারবে, কী কাজ পারবে না ইত্যাদি নিয়ে আরো অনেক নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম আইন। শুরুতেই কাজের সময়সীমা সম্পর্কিত নিয়ম দেখে নেয়া যাক। শ্রম আইনের ধারা ৪১ অনুযায়ী কোনো কিশোরকে কোনো কারখানা বা খনিতে দৈনিক ৫ ঘণ্টার অধিক এবং সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার অধিক সময় কাজ করানো যাবে না। তবে যদি কিশোর ওভারটাইম করে থাকে তাহলে সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার স্থলে ৩৬ ঘণ্টা করানো যেতে পারে। কোনো প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ৭ ঘণ্টার বেশি এবং সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করানো যাবে না। ওভারটাইমসহ ৪৮ ঘণ্টা কাজ করানো যেতে পারে, এর বেশি নয়। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো কিশোরকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যবর্তী সময়ে কোনো কাজ করানো যাবে না। প্রতিষ্ঠানের কাজের সময় দুটি পালায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং কোনো পালার সময়সীমা সাড়ে সাত ঘণ্টার বেশি হবে না। কোনো কিশোরকে কেবল একটি রিলেতে নিয়োগ করা যাবে এবং পরিদর্শকের লিখিত পূর্বানুমোদন ছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে তা একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না। এখানে ‘রিলে’ বলতে শ্রমিক দল বোঝানো হয়েছে। পাশাপাশি একই দিনে কোনো কিশোর শ্রমিককে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে দেয়া যাবে না। সাপ্তাহিক ছুটির ক্ষেত্রে অন্যান্য শ্রমিকের মতো কিশোর শ্রমিকও ছুটি উপভোগ করবে, যা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১ দিন, দোকান, বাণিজ্য বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেড় দিন এবং সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবিচ্ছিন্ন ২৪ ঘণ্টার ১ দিনের ছুটি। উল্লেখ্য, এই ছুটির জন্য কারো মজুরি থেকে কোনো মজুরি কাটা হবে না।
কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে মালিক পক্ষের জন্য। যেমন_ কোনো কিশোরকে কোনো প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি চালু অবস্থায় তা পরিষ্কারের জন্য, তাতে তেল প্রদানের জন্য বা তাতে সুবিন্যস্ত করার জন্য বা ওই চালু যন্ত্রপাতির ঘূর্ণায়মান অংশগুলোর মাঝখানে অথবা স্থির এবং ঘূর্ণায়মান অংশগুলোর মাঝখানে কাজ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। তা ছাড়া যন্ত্রপাতির কাজের ক্ষেত্রেও রয়েছে দিকনির্দেশনা। সরকার বিজ্ঞপ্তি মারফত ঘোষিত এমন বিপজ্জনক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে কোনো কিশোরকে যন্ত্রপাতিসংক্রান্ত বিপদ সম্পর্কে এবং ওই ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল না করিয়ে কাজ করানো যাবে না। যন্ত্রপাতিসংক্রান্ত অভিজ্ঞ এবং পুরোপুরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে না থাকলে বা যথেষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করিয়ে কোনো কিশোরকে কাজ করানো যাবে না। তা ছাড়া সময়ে সময়ে সরকার বিভিন্ন গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের যে তালিকা প্রকাশ করবে সেসব কাজে কোনো কিশোর-কিশোরীকে নিয়োগ করা যাবে না।
৪২ ধারায় ভূগর্ভে এবং পানির নিচে কোনো কাজে কোনো কিশোরকে নিয়োগ দিতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। তবে এখানে কতটুকু ভূগর্ভে বা কতটুকু পানির নিচে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
বয়সসংক্রান্ত বিরোধ : অনেক সময় কেউ একজনকে শিশু না কিশোর কোনটা হিসেবে বিবেচনা করবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এমন বিতর্ক হলে পরিদর্শক রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের বরাবর প্রেরণ করবেন এবং ওই চিকিৎসকের দেয়া বয়সসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র ওই ব্যক্তির বয়স সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।
আবার, সক্ষমতাসংক্রান্ত ঝামেলায় পড়লে কিশোর বা তার পিতা-মাতা বা অভিভাবক বা মালিক অনুরোধপ্রাপ্ত হলে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক কিশোরকে পরীক্ষা করবেন এবং তার সক্ষমতার প্রত্যয়নপত্র দেবেন। এই প্রত্যয়নপত্র প্রদানের দিন থেকে ১২ মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কিন্তু যদি কোনো কিশোরের কাছে এই প্রত্যয়নপত্র না থাকে বা প্রত্যয়নপত্রে উলি্লখিত কাজের জন্য আর সক্ষম নয় বলে পরিদর্শকের মনে হয়, তবে পরিদর্শক রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসককে ওই কিশোরের পরীক্ষা করতে বলবেন এবং কিশোরটি ওই পরীক্ষায় সক্ষম বলে প্রত্যয়িত না হওয়া পর্যন্ত অথবা কিশোরটি আর কিশোর নয় এই মর্মে প্রত্যয়িত না হওয়া পর্যন্ত কিশোরকে কোনো কাজ না দেয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারবেন।
শিশু শ্রমিক নিয়োগে ব্যতিক্রম : ৩৪ ধারায় শিশু শ্রম নিষেধ করলেও ধারা ৪৪ এসে ১২ বছর বয়স্ক কোনো শিশুকে হালকা কাজে নিয়োগ করা যেতে পারে বলে অনুমতি দেয়া হয়েছে, তবে শর্ত হচ্ছে ওই কাজ যেন শিশুর স্বাস্থ্য ও উন্নতির জন্য বিপজ্জনক না হয় অথবা শিশু যদি বিদ্যালয়গামী হয় তবে তার শিক্ষা গ্রহণে বিঘ্ন না ঘটায়। এবং কিশোর শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সব বিধান যতদূর সম্ভব শিশু শ্রমিকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এই হলো কিশোর এবং শিশু শ্রমিকের নিয়োগ, কর্মঘণ্টা, বিধিনিষেধসংক্রান্ত বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর মূল উল্লেখযোগ্য ভাষ্য।
লেখক : কো-ফাউন্ডার এবং
কো-রিসার্চার, ল-মেট

বাবা-মাকে ভরণপোষণে সন্তানের বাধ্যবাধকতা

বাবা-মাকে ভরণপোষণে সন্তানের বাধ্যবাধকতা’পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ একটি জনকল্যাণকর আইন। কোনো সন্তান যদি যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই বাবা-মার ভরণপোষণ না করে তাহলে ওই বাবা-মা ভরণপোষণের জন্য এ আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায় করতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকলেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনকারী বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে যাতে সন্তান কর্তৃক অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার না হন, সেজন্য পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ পাস হয়। আমরা জানি, পারিবারিক আইনে স্ত্রী এবং সন্তানের ভরণপোষণের বিধান রয়েছে। সাধারণত স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর এবং সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার ওপর ন্যস্ত হয়। আবার অনেক সময় স্ত্রী তার বিয়েবিচ্ছেদের পরও স্বামীর কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন। কিন্তু বাবা-মা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন, তখন তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব কার ওপর অর্পিত হবে এ আইনে সে সম্পর্কিত সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
সব বাবা-মা-ই সন্তানের মঙ্গল চান। সাধারণত কোনো বাবা-মা-ই সন্তানের বিরুদ্ধে যান না। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে কোনো সন্তান বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও বসবাস করতে বাধ্য করে, অথবা কোনো সন্তান যদি যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণে বাবা-মার ভরণপোষণ না করেন, তাহলে তারা এ আইনের অধীনে ভরণপোষণের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের অধিকার আদায় করতে পারেন।
২০১৩ সালের ১ জুলাই চীনে এরকম একটি আইন পাস হয়। ‘এলডারলি রাইটস ল’ বা প্রবীণ অধিকার আইন নামের সেই আইনটির মূলকথা_ সন্তানদের অবশ্যই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতে হবে। ৭৭ বছরের বৃদ্ধ যে মা ৪০ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল দূরে থাকেন, তাকে বন্ধের দিনগুলো ছাড়াও দুই মাসে অন্তত একবার দেখতে যেতে হবে। এভাবে আইন করে আসলে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের অধিকার কতটুকু সংরক্ষণ করা যাবে বলা মুশকিল। তারপরও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিও আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে সেদিক থেকে এই আইনের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এবার চলুন পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩-তে কী আছে।
যাদের ওপর ভরণপোষণের দায়িত্ব ন্যস্ত : আইনে ভরণপোষণ প্রদানে সন্তান বলতে শুধু পুত্রকেই বোঝায়নি বরং কন্যাকেও বুঝিয়েছে। অর্থাৎ পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধু ছেলের একার নয় বরং মেয়েকেও নিতে হবে। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনা হয়েছে। আর ভরণপোষণ শুধু কোনো বিশেষ সন্তান নেবে তা নয় বরং সবাইকে নিতে হবে। তবে একাধিক সন্তান থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। কোনো সন্তান পিতা-মাতাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তানকেই তাদের বাবা-মার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে। বাবা-মা একত্রে বা আলাদা বসবাস করলে প্রত্যেক সন্তানকে সাধ্যমতো তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।
ভরণপোষণের পরিমাণ : বাবা-মা যদি সন্তানের সঙ্গে বসবাস না করেন তবে তাদের প্রত্যেক সন্তান নিজ নিজ উপার্জন থেকে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।
বাবা-মা ছাড়া আর যাদের ওপর ভরণপোষণের দায়িত্ব : আইনটি শুধু বাবা-মায়ের ভরণপোষণ বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাবা-মায়ের অবর্তমানে দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভরণপোষণ বিষয়েও জোর দিয়েছে। বাবার অবর্তমানে দাদা-দাদিকে এবং মায়ের অবর্তমানে নানা-নানিকে বাবা-মায়ের মতো ভরণপোষণ দিতে হবে।
পিতা-মাতার ভরণপোষণে অবাধ্য সন্তানের শাস্তি : আইনটি সন্তানদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি অপরাধ, দ- ও বিচারব্যবস্থা কেমন হবে সে বিষয়েও বিধান দিয়েছে। যেমন_ কেউ যদি এই বিধানাবলি লঙ্ঘন করে তবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- হতে পারে। অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদ- প্রদান করতে পারে আদালত। এ ছাড়া কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয় যদি পিতা-মাতা বা দাদা-দাদি বা নানা-নানির ভরণপোষণ প্রদানে বাধা দেয় বা অসহযোগিতা করে তবে তার সাজাও উপরোলি্লখিত দ-ের মতোই হবে।
অপরাধের ধরন : আইনে কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই তা আমলযোগ্য। এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় জামিনও পাওয়া যেতে পারে। মামলায় আপস-মীমাংসারও সুযোগ রয়েছে।
যেখানে অভিযোগ দায়ের করতে হয় : অপরাধের অভিযোগ দায়ের ও বিচার হবে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। তবে অপরাধের লিখিত অভিযোগ বাবা-মাকেই দায়ের করতে হবে। অন্যথায় আদালত তা গ্রহণ করবেন না। বাবা-মায়ের অবর্তমানে কে লিখিত অভিযোগ করার অধিকারী সে বিষয়ে আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
আদালতের বাইরে বিকল্প সমাধান : আদালত সংশ্লিষ্ট অভিযোগের আপস নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার বা কাউন্সিলর কিংবা অন্য কোনো উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে শুনানির সুযোগ দিয়ে তবেই নিষ্পত্তি করতে হবে এবং তখনই তা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি হয়েছে বলে গণ্য হবে।
আমাদের কাছের দেশ সিঙ্গাপুরে ১৯৯৫ সালে ‘মেইনটেইন্যান্স অব প্যারেন্ট অ্যাক্ট’ প্রণীত হয় এবং ১ জুন ১৯৯৬ সালে এ আইন কার্যকর হয়। এ আইনে অসমর্থ পিতামাতার সুরক্ষা ও ভরণপোষণের জন্য সন্তানদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। আইন অমান্যকারীকে আদালতের মাধ্যমে ৫০০০ সিঙ্গাপুরি ডলার জরিমানা ও কারাদ-ের বিধান রয়েছে। পাশের দেশ ভারতে ‘মেইনটেইন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব প্যারেন্ট অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেনস অ্যাক্ট ২০০৭’ সালে প্রণীত হয় এবং জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া সব রাজ্যে এ আইন বলবৎ হয়। এ আইনেও বাবা-মায়ের ভরণপোষণ ও সুরক্ষা নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এ আইনেও আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনের অধীন বাংলাদেশে প্রথম মামলা : সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রণীত আইন ৫/৫ (০১) এবং ৫(২) ধারায় চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর পশ্চিম পাড়ার মো. লিয়াকত আলী (৬০), তার বড় সন্তান ইয়াসিন রানা (৩০) তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪-এ মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে মো. লিয়াকত আলী উল্লেখ করেন, ১ নাম্বার বিবাদী মো. ইয়াসীন রানা তার ছেলে। বিগত ২০০৪ সালে লিয়াকত আলী .৩৯ একর জমি বিক্রি করে তার সন্তানকে ৩ লাখ টাকা খরচ করে আবুধাবিতে পাঠান। সেখানে ইয়াসিন রানা বাংলাদেশি টাকায় ৫৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে। আবুধাবি যাওয়ার পর অন্য আসামিদের কুপরামর্শে বাদী লিয়াকত আলী ও তার স্ত্রী মোসা. মাজেদা খাতুনের (৫৫) সঙ্গে সে যোগাযোগ, চিকিৎসাসেবা ও ভরণপোষণ না দিয়ে অন্য বিবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশ থেকে ইয়াসিন রানা টাকা-পয়সা তার স্ত্রী রাশিদা আক্তার রিতার কাছে পাঠাত। অন্য বিবাদীদের আপত্তির কারণে বাদী লিয়াকত আলী ও তার স্ত্রী মাজেদা খাতুনের ভরণপোষণ না করে বিদেশ থেকে পাঠানো সব টাকা রাশিদা আক্তার রিতা, তার পিতা শেখ মো. বাদল (বাবুল), রিতার মা লুৎফা বেগম ও রিতার ভাই সোহেল তাদের সংসারে ওসব টাকা খরচ করে দেয়। লিয়াকত আলী ও মাজেদা খাতুন তাদের সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে অন্য বিবাদীদের আপত্তির কারণে তারা যোগাযোগ করতে পারে না। এমন অবস্থায় লিয়াকত আলীর ছেলে আলআমিন ও হাবিবুর রহমান জিলানীর লেখাপড়া এবং তাদের উপার্জন করার কোনো পথ না থাকার কারণে অনাহারে অর্ধাহারে থেকে দিন কাটাতে হয়। গত ১ নভেম্বর’২০১৩ সালে ১ নাম্বার বিবাদী ইয়াসিন রানা দেশে এসে অন্য বিবাদীদের পরামর্শে নিজ বাড়িতে না গিয়ে ঢাকা থেকে ঢাকা নবাবগঞ্জের দেওতলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে চলে যায়। সেখান থেকে ১৪ নভেম্বর লিয়াকত আলী বাড়িতে এসে ইয়াসিন রানাসহ অন্য বিবাদীরা তার পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ, চিকিৎসাসেবা না দিয়ে উল্টো বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে জমি-জমা, সহায়-সম্পত্তি সব কিছু ইয়াসিন রানার নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য চাপ সৃৃষ্টি করে । না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হুমকি দেয়।
এমন অবস্থায় উপায়ন্তর না পেয়ে গত ১৯ নভেম্বর ২০১৩ ইং তারিখে মঙ্গলবার মো. লিয়াকত আলী বাদী হয়ে ইয়াসিন রানা, রাশিদা আক্তার রিতা, শেখ মো. বাদল, লুৎফা বেগম ও মো. সোহেলকে বিবাদী করে চাঁদপুর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এর বিজ্ঞ বিচারক মো. শওকত হোসাইনের আদালতে ২০১৩ সালের ৪৯নং আইন সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রণীত আইন ৫/৫ (০১) এবং ৫(২) ধারায় অভিযোগ দায়ের করে। বিজ্ঞ বিচারক ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলার প্রধান আসামি মো. ইয়াসীন রানার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

তালাক ও বাংলাদেশের আইন সমাচার(সংগৃহীত)


ভুলে ভরা আমাদের বাংলাদেশে তালাক ও মুসলীম আইন সমাচার:

তালাকের আইনগত দিক:

১. কোনো ব্যক্তি স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্রই সম্ভব স্থানীয় ইউপি/পৌর/সিটি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে।

২. নিম্নের (৫) উপ-ধারার ব্যবস্থাবলীর মাধ্যম ব্যতিত প্রকাশ্য অথবা অন্যভাবে প্রদত্ত কোনো তালাক, পূর্বাহ্নে বাতিল না হলে (১) উপ-ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ হবে না।

৩. উপরোক্ত (১) উপ-ধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপোষ বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবে এবং উক্ত সালিশী পরিষদ এ জাতীয় সমঝোতার (পুনর্মিলনের) জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই অবলম্বন করবে।

৪. তালাক ঘোষণাকালে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে বা অন্তঃসত্ত্বা থাকলে উপরের (৩) উপ-ধারায় উল্লেখিত সময় অথবা গর্ভাবস্থা-এ দুইটির মধ্যে দীর্ঘতরটি অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবৎ হবে না।

৫. অত্র ধারা অনুযায়ী কার্যকরী তালাক দ্বারা যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে, সে স্ত্রী এ জাতীয় তালাক তিন বার কার্যকরী না হলে কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে পারবে।

৬. যে কোনো ধরনের তালাক রেজিষ্টেশনের ক্ষেত্রে নিকাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজী সাহেবকে ২০০ (দুই শত) টাকা ফি প্রদান করে তালাক রেজিষ্ট্রি করতে হবে (১৯৬১ সালের ২৯শে আগষ্ট তারিখের গেজেট নোটিফিকেশন)। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন এর ধারা ৬ মোতাবেক তালাক রেজিষ্ট্রেশন করা প্রয়োজন। যিনি বিবাহ রেজিষ্ট্রি করবে তারাই তালাক রেজিষ্ট্রি করতে পারবে। কোনো বিয়ে বা তালাক রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হবার পর নিকাহ রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নিকাহনামা বা তালাকনামার সত্যায়িত প্রতিলিপি প্রদান করবেন এবং ঐরূপ সত্যায়িত প্রতিলিপির জন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না (ধারা-৯)৷

নোটিশ ছাড়া তালাক দিলে শাস্তি ধারা-৭ (২) অনুযায়ী নোটিশ ছাড়া তালাক দিলে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার শাস্তি হবে।

স্ত্রীর পক্ষে বিচ্ছেদ স্ত্রী তিনভাবে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চাইতে পারে। ১. তালাক-ই-তৌফিজ ২. খুলা। ৩. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ।

১. তালাক-ই-তৌফিজ নিকাহনামার ১৮ নং ঘরে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পন করে থাকে, সে ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চায় তাহলে সে বিচ্ছেদকে তালাক-ই- তৌফিজ বলে। তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারবারিক অর্ডিন্যান্সের ৭ ধারায় বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।

২. খুলা স্বামী এবং স্ত্রীর আলোচনা সাপেক্ষে যে বিচ্ছেদ হয় তাকে ‘খুলা’ বিচ্ছেদ বলে, তবে স্বামীকে ‘খুলা’ বিচ্ছেদে রাজী করানোর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর (প্রয়োজনে কোনো কিছুর বিনিময়ে)। এ ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে ইদ্দতকালীন ও গর্ভস্থ সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী এক্ষেত্রে প্রস্তাবক যেহেতু স্ত্রী, তাই চেয়ারম্যানের কছে স্ত্রী নোটিশ পাঠাবে।

৩. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ তালাক-ই-তৌফিজ ও খুলার মাধ্যমে স্ত্রী যদি বিচ্ছেদ না নিতে পারে এবং স্ত্রী যদি বিচ্ছেদ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন মনে করে তাহলে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে অত্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কি কি কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে।

কারণগুলো হলো ১. চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে। ২. দুই বছর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে। ৩. স্বামীর সাত বছর কিংবা তার চেয়েও বেশী কারাদণ্ড হলে। ৪. স্বামী কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে। ৫. বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে। ৬. স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে। ৭. বিবাহ অস্বীকার করলে। কোনো মেয়ের বাবা বা অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তা হলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সর্ম্পক (সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোনো বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে। ৮. স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লংঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে। ৯. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে।

উপরে যে কোনো এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারে, আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেবার পর সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবে। ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবে সে দিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।

স্বামীর আদালত স্বীকৃত নিষ্ঠুর ব্যবহার সমূহ ক) অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও, তার জীবন শোচনীয় করে তুলেছে এমন হলে। খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবনযাপন করলে। গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপনে বাধ্য করলে। ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে। ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাধা দিলে। চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে। ছ) এছাড়া অন্য যে কোনো কারণে (যে সকল কারণে মুসলিম আইনে বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ করা হয়)।

তালাক কখন কার্যকরী হয় না গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না৷ এক্ষেত্রে ৯০ দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার মধ্যে যেদিনটি পরে হবে সেদিন থেকে তালাক কার্যকরী হবে৷ অর্থাৎ স্ত্রী গর্ভবতী হলে, সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না৷ মনে রাখতে হবে এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রী পূর্ণ ভরণপোষণ পেতে আইনত হকদার৷

তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রীর পুনরায় বিয়ে ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৬) ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।

উদাহরণ: রহিম তার স্ত্রী রুণাকে তালাক দিল। তিন মাস পর রহিম বুঝতে পারল যে, তালাক দেয়াটা তার ভূল হয়েছে এবং সে এখনো রুণাকে ভালবাসে৷ খবর নিয়ে জানা গেল রুনাও তার কাছে ফিরে আসতে চায়। এখন তারা যদি আবার একসাথে বসবাস করতে চায় তবে তাদেরকে পুনরায় বিয়ে করতে হবে৷ এখানে বলে রাখা দরকার যে, এক্ষেত্রে হিল্লা বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং তালাক হওয়া দম্পতি হিল্লা বিয়ে ছাড়াই পুনরায় বিয়ে করে একসাথে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু পরপর তিনবার তালাক হলে তৃতীয়বার স্ত্রীকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দিয়ে তারপর বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রথম স্বামী বিয়ে করতে পারবে।

তালাকের পর সন্তানের অবস্থান তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। এক্ষেত্রে ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসদ্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে৷ তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে৷ যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন।

তালাক প্রত্যাহার করা যায় ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগেই তালাক প্রত্যাহার করা যায়৷৯০ দিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এটা মাথায় রেখে যাতে এ সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষ ঠান্ডা মাথায় সব কিছূ ভেবে চিন্তে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারে। একটা বিষয় পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, তালাক দেওয়ার নব্বই দিন পর তালাক কার্যকরী হয় কিন্তু এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে যে কোন দিন তালাক প্রত্যাহার করা যাবে।

দেন-মোহর পাবার অধিকারঃ তালাক যে পক্ষ থেকেই দেয়াই হোক না কেন স্ত্রী দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ দাম্পত্য মিলন ঘটলে স্ত্রী তালাক দানের পরপরই তাৎক্ষণিক ও বিলম্বিত উভয় মোহরের পুরো অর্থের অধিকারী হয়। তবে দাম্পত্য মিলন না ঘটলে এবং মোহরানা সুনির্দিষ্ট হয়ে থাকলে স্ত্রী মোহরানার অর্ধেকের অধিকারী। আর নির্ধারিত না থাকলে স্ত্রী তিনটি পোষাক উপহার পাবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে এ অধিকার খর্ব হয়নি।

তালাক সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে যুগোপযোগী করা দরকার ১৯৩৯ সালের বিবাহবিচ্ছেদ আইনের ধারা-২ এর উপ-ধারা ৬ এ বলা হয়েছে, স্বামী কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হলে স্ত্রী তালাক নিতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে কুষ্ঠ একটি নিরাময় রোগ, বর্তমান যা কোনো মারাত্মক রোগ নয়। তাই এ বিধিতে কুষ্ঠরোগের কারণে স্বামীকে তালাক প্রদানের ব্যবস্থাটি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এইডস রোগটির কথা স্পষ্টভাবে সংযোজন করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ের অজুহাত দেখিয়ে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে চান, যাতে প্রথম স্ত্রী মোহরানা বা ভরণপোষণের অধিকার দাবি না করতে পারেন। তাই এ ক্ষেত্রেও সুষ্পষ্ট বিধান সংযোজন প্রয়োজন।

হিন্দু আইনে যা বলা হয়েছে সনাতন হিন্দু আইনে সরাসরি বিবাহবিচ্ছেদের কোনো বিধান নেই। তবে ভারতে ১৯৫৫ সালের হিন্দুু বিবাহ আইনে কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্রে আনীত অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব হলেও বাংলাদেশে এ আইন প্রযোজ্য নয়। স্ত্রী যদি একান্তই মনে করেন যে, স্বামীর সঙ্গে বসবাস করা দুর্বিসহ, তা হলে তিনি পিত্রালয়ে বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে পৃথক থাকতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হন। ১৯৪৬ সালে বিবাহিত নারীর পৃথক বাসস্থান এবং ভরণপোষণ আইন পাস হওয়ার পর, এ আইন অনুযায়ী- এক স্ত্রীর বর্তমানে স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেতে পৃথক থাকলেও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য থাকবেন।

খ্রিষ্টান ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ খ্রিষ্টানদের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় আইন রয়েছে, তা ব্রিটিশ কর্তৃক প্রবর্তিত, যা ১৮৬৯ সালের ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্ট নামে পরিচিত। কিন্তু এ আইনের কোনো ক্যাথলিক খীষ্টান বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালে তা ক্যাথলিক মন্ডলী কৃর্তক গ্রহণীয় নয়। কেননা বিয়ে প্রসঙ্গে ক্যাথলিকমন্ডলী বৈধ বিয়েতে বিচ্ছেদ মানেন না। প্রোটেষ্ট্যান্ট খীষ্টান সম্প্রদায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বৈধ বিয়ের বিচ্ছেদ মেনে নেয়। তবে মহামান্য পোপের (ক্যাথলিখ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মযাজক) বিশেষ বিবেচনায় অথবা চার্চের হস্তক্ষেপে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, ১৮৬৯ সালের ত্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্টের বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে নারীকে অধিকার প্রদান করা হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্ত্রীর ক্ষমতা ও অধিকারকে স্বামীর পাশাপাশি সমুন্নত রাখা হয়েছে এবং স্ত্রীকেও স্বামীর পাশাপাশি সমতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদ-সংক্রান্ত যে কোনো মামলা পারিবারিক অদালতে দায়ের করা যায়।

বিবাহ বিচ্ছেদ মোকদ্দমার আদালত ও মোকদ্দমার খরচ ১৯৮৫ সালের বিবাহ পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও প্রবর্তনের পর থেকে উক্ত আইনের ধারা ৫ (ক) অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ মোকদ্দমা পারিবারিক আদালতে রুজু করতে হবে। স্ত্রীর পৃথক সম্পত্তি রয়েছে এমন ক্ষেত্র ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ মোকদ্দমায় স্বামীকেই খরচ বহন বহন করতে হবে ব্রিটিশ আইনের এ বিধানটি, মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

তালাক রোধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব: অনেক সময় দেখা যায়,মানুষ রাগের মাথায় অথবা আবেগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ পরে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু তখন কি করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। এক্ষেত্রে যদি চেয়ারম্যান সালিসীর মাধ্যমে উভয় পক্ষকে ডেকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার দ্বারা তাদের মধ্যে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করে দেন তবে দু`পক্ষেরই ভালো হয়। এজন্য বলা হয় তালাক রোধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও গুরুত্ব অপরিসীম।

মুসলিম আইনে বিবাহ বিচ্ছেদে নারী মুসলিম আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ করার জন্য নারীদের হাতে যে কয়েক প্রকার তালাকের বিধান রয়েছে তা হলো- ক. ‘খুল’ বা ‘খুলা’ তালাক, খ. মুবারাত এবং গ. তালাক-ই-তাওফিজ। প্রচলিত হানাফি আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম স্ত্রী শুধু খুলা তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারে। এই তালাকে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে। তবে উল্লেখ্য, এই ধরনের তালাকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য স্ত্রী তার স্বামীকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। সাধারণত ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্ত্রী তার আর্থিক দাবির কোনো অংশ ত্যাগ করে এবং তখন স্বামী তালাক দেয়ার মাধ্যমে স্ত্রীকে বিবাহবন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয়।

মুবারাত হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। এ ধরনের বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় উভয়ই বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয় বলে কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না। শারিয়া অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট ১৯৩৭ এই তালাকের বিধান ছিল। মুবারাত তালাকের প্রচলন খুব একটা নেই বললেই চলে।

সবশেষে তালাক-ই-তাওফিজ বা অর্পিত ক্ষমতাবলে দেয়া তালাক। এই ধরনের তালাকে স্বামী কিছু শর্তসাপেক্ষে তালাক দেয়ার ক্ষমতা স্ত্রীকে প্রদান করে এবং উক্ত শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী তালাক প্রদান করতে পারবে। যেমন স্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার স্বামী বিবাহ সম্পর্কিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম নয় বা স্বামী ঠিকমতো খরপোশ প্রদান করে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, তালাক প্রদান করার এই অধিকার স্ত্রীর একচ্ছত্র নয় বরং স্বামীর ইচ্ছার (হস্তান্তরের) ওপর নির্ভরশীল।

উল্লেখ্য, মুসলিম আইনে ‘খুলা’ এবং ‘মুবারাত’ ছাড়া সব ক্ষেত্রে তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করার ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে পুরুষের ওপর ন্যস্ত। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রী তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারে তবে তা একচ্ছত্রভাবে নয় বরং স্বামীর সম্মতি সাপেক্ষে। প্রচলিত মুসলিম আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর অসাম্য দূর করার জন্য ১৯৩৯ সালে পাস করা হয় মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন। এই আইনে বিভিন্ন কারণে যেমন স্বামী যদি ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হয় বা স্বামী যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয় অথবা স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে তাহলে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারবে। সুতরাং স্বামী কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতা বলে নয় অথবা কোনো প্রকার আর্থিক দাবি ত্যাগ না করে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, মালিকী মতবাদ অনুসরণ করে ‘নিষ্ঠুরতা’ বা ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’কে উক্ত আইনে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করতে পারে। ‘নিষ্ঠুরতা’ শব্দটি ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আমাদের আদালতও ঘোষণা করেছে যে ‘নিষ্ঠুরতা’ বলতে শুধু শারীরিক নির্যাতন বোঝাবে না বরং যে কোনো মানসিক নির্যাতনও নিষ্ঠুরতার অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন, হাসিনা আহমেদ মামলায় (৩২ ডিএলআর, হাইকোর্ট বিভাগ, ২৯৪) আদালত মন্তব্য করেছেন যে স্ত্রীর অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে প্রতিনিয়ত দোষারোপ করা হলে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারবে। কুতুবউদ্দিন জায়গীরদার মামলায় (২৫ ডিএলআর, হাইকোর্ট বিভাগ, ২১) আদালত মন্তব্য করেছেন যে, নিষ্ঠুরতার (যা মানসিক নির্যাতনকেও অন্তর্ভুক্ত করে) কারণে মুসলিম আইনে বিবাহিত একজন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। এছাড়া হোসনে আরা বেগম মামলায় (৪৩ ডিএলআর, হাইকোর্ট বিভাগ, ৫৪৩) আদালত ‘নিষ্ঠুরতা’ শব্দের একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। উক্ত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, ‘নিষ্ঠুরতা বলতে শুধুমাত্র শারীরিক নির্যাতন বোঝাবে না বরং স্বচ্ছল কোন পরিবারে কোন স্ত্রীকে (যার অভ্যাস নাই) যদি প্রাত্যহিক গৃহকর্ম করতে বাধ্য করা হয় তাহলে তা নিষ্ঠুরতা বলে গণ্য হবে।’

মুসলিম আইনের বিভিন্ন মতবাদগুলোর মধ্যে একমাত্র মালিকী মতবাদে স্বামীর নিষ্ঠুরতার জন্য স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারে। প্রচলিত হানাফি মতবাদ অনুযায়ী স্বামী যদি ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারে। অন্যান্য মতবাদেও বিভিন্ন কারণ যেমন স্বামী যদি ভরণপোষণ দিতে অস্বীকার করে অথবা স্বামী যদি পাগল হয় তাহলে স্ত্রী আদালতের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারে।

গত কয়েক দশকে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সাথে সাথে বিচার বিভাগের দৃষ্টিভঙ্গিরও ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। বিশেষ করে ষাটের দশক থেকে, যখন দেনমোহর প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার কারণে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারে বলে আদালত মত দিয়েছিলেন, এই পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে নেলি জামান মামলাটি (৩৪ ডিএলআর, হাইকোর্ট বিভাগ, ২২১) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উল্লিখিত মামলায় প্রথমবারের মতো সামাজিক পরিবর্তন এবং নারীর স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করার জন্য আদালত মত প্রদান করেন। আদালত মত প্রকাশ করেন যে, সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে নারী অধিকারের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে এবং বিবাহের দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রেও তাদের স্বাধীন সত্তাকে সম্মান জানাতে হবে।

বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কাজির দায়িত্ব ও তালাক রেজিস্ট্রেশন মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন ১৯৭৪’ অনুসারে বিয়ের মতো তালাকও রেজিস্ট্রি করতে হয়। নিকাহ নিবন্ধক অর্থাৎ কাজি তার এখতিয়ারভূক্ত করার জন্য নিকাহ নিবন্ধন/কাজি দুইশত টাকা (একশত টাকা মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি বিধিমালা ১৯৭৫ (১৮/২ অনুসারে) ফি নিতে পারেন। আইনানুসারে, যে ব্যক্তি তালাক কার্যকর করেছেন তিনি রেজিস্ট্রির জন্য আবেদন করবেন এবং ফি দেবেন। নিকাহ নিবন্ধক পরীক্ষা করে দেখবেন উক্ত দু’পক্ষের মধ্যে সত্যি তালাক কার্যকর হয়েছিল কিনা। সাধারণত স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষেরই দায়িত্ব হলো, নিকাহ নিবন্ধন ও তালাক রেজিস্ট্রির প্রত্যয়ন কপি তুলে দেয়া এবং সংরক্ষণে রাখা। যদি নিকাহ রেজিস্ট্রার কোন তালাক রেজিস্ট্রেশন করতে অস্বীকৃতি জানান, তবে সেই ক্ষেত্রে উক্ত রেজিস্ট্রিকরণের নিমিত্ত দরখাস্ত করেছিল এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সেরকম অস্বীকৃতির ৩০ দিনের ভেতর জেলা প্রশাসকের কাছে আপীল দায়ের করতে পারেন ও ওইরূপ আপীলের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত আদেশই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে।

উপসংহারঃ তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন ও স্ত্রী কর্তৃক শর্ত সাপেক্ষে তালাকের অধিকার প্রদানসহ মুসলিম পরিবারের পারিবারিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৩৯ সালে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন এবং ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন জারি করা হয়। বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে এই আইনকে পরিমার্জন ও গ্রহণযোগ্য করা হয়। ১৯৭৪ সালে মুসলিম বিবাহ তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন প্রণীত হয়। মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর বৈধ স্বত্ত্ব-স্বার্থ নির্ধারণ করে স্ব-স্ব স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন একত্রীকরণ ও সংশোধন করে এটি প্রণয়ণ করা হয়। এরপর বিবাহ-তালাক বিধিমালা রেজিস্ট্রেশন ১৯৭৫ সালে জারি করা হয়। বিবাহ-বিচ্ছেদ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি পারিবারিক বিষয়াদির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ প্রণীত হয়।